রোহিঙ্গাদের মধ্যযুগীয় ইতিহাস, অস্তিত্ব ও গণহত্যা-১
আমাদের সবার জানা আছে যে, জঙ্গি কিংবা আই এস চলমান কয়েক বছরের আলোচিত ইস্যু। কিন্তু "রোহিঙ্গা নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ" জঙ্গিবাদ বা আই এস উত্থানেরও কয়েক শতাব্দী পূর্বেকার ঘটনা, যখন যঙ্গি বা আই এস এর ভ্রুণও সৃষ্টি হয় নি। বর্তমানে যদি ওরা জঙ্গি বা আই এস হয়ে থাকে তাহলে তখন ওরা কি ছিল?
রোহিঙ্গা সম্পর্কে ইতিহাস কি বলছে?
সহজ কথায় বললে, রোহিঙ্গা সমস্যা এখনকার নয়। বাংলাদেশ জন্মের আগে এমন কি ভারতের জন্মের আগে থেকে এই সমস্যা।
আর গভীরভাবে ইতিহাস খতিয়ে দেখলে স্পষ্ট হয় যে, আরাকান বহু শতাব্দী ধরেই রোহিঙ্গা মুসলমান, রোসাঙ্গ হিন্দু আর মহাযানী বৌদ্ধদের মাতৃভূমি। মধ্যযুগে এই হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বলা হতো চন্দ্র-রোসাং আর মুসলমানদের রোহাং। রোহাং থেকেই আজকের রোহিঙ্গা কথাটার জন্ম। হিন্দু চন্দ্র রাজারা এবং মুসলিম সুলতানরাই ছিলেন আঠারো শতকের আগে পর্যন্ত আরাকানের শাসক।
ইতিহাস বলছে, রোহিঙ্গা কারা? বর্তমান মিয়ানমারের "রোসাং" এর অপভ্রংশ আরাকানের মধ্যযুগীয় নাম "রোহাং" এলাকায় এ জনগোষ্ঠীর বসবাস। আরাকানের প্রাচীন নাম রূহ্ম জনপদ। ইতিহাস ও ভূগোল বলছে, রাখাইন প্রদেশে পূর্ব ভারত হতে প্রায় খৃষ্টপূর্ব ১৫০০ বছর পূর্বে অষ্ট্রিক জাতির একটি শাখা "কুরুখ" নৃগোষ্ঠী প্রথম বসতি স্থাপন করে, ক্রমান্বয়ে বাঙালি হিন্দু ( যারা পরবর্তীকালে ধর্মান্তরিত মুসলিম), পার্সিয়ান, তুর্কি, মোগল, আরবীয় ও পাঠানরা বঙ্গোপসাগরের উপকূল বরাবর বসতি স্থাপন করেছে। এ সকল নৃগোষ্ঠীর শংকরজাত জনগোষ্ঠী হলো এই রোহিঙ্গা। বস্তুত রোহিঙ্গারা হল আরাকানের বা রাখাইনের একমাত্র ভুমিপুত্র জাতি অর্থাৎ, স্থায়ীভাবে খাস বাসিন্দা। পক্ষান্তরে ১০৪৪ খ্রিষ্টাব্দে আরাকান রাজ্য দখলদার কট্টর বৌদ্ধ বর্মী রাজা "আনাওহতা" (Anawahta) বার্মা থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করে দক্ষিণাঞ্চলে মগদের বৌদ্ধ বসতি স্থাপন করান। রাখাইনে দুটি সম্প্রদায়ের বসবাস। দক্ষিণে বার্মার বংশোদ্ভুত ‘মগ’ ও উত্তরে ভারতীয় বংশোদ্ভুত ‘রোহিঙ্গা’। মগরা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। মগের মুল্লুক কথাটি বাংলাদেশে খুবই পরিচিত। দস্যুবৃত্তির কারণেই এমন নাম হয়েছে ‘মগ’দের। এক সময় তাদের দৌরাত্ম্য ঢাকা পর্যন্ত পৌঁছেছিল। মোগলরা তাদের তাড়া করে জঙ্গলে ফেরত পাঠায়।
১৭০০ শতকের সময় এশিয়ার বিখ্যাত বাণিজ্য নগরী বলে পরিচিত ছিল আরাকানের এমরায়ুক। এর স্বাধীন সুলতান ছিলেন একজন মুসলমান। তাহলে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, রোহিঙ্গা ও দেশটির অন্য আদিবাসী মুসলমানরা মিয়ানমারে উড়ে আসা অধিবাসী নয়। বরং বর্মীরাই বহিরাগত। এই উপমহাদেশ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় সর্বপ্রথম যে কয়টি এলাকায় মুসলিম বসতি গড়ে ওঠে, আরাকান তার মধ্যে অন্যতম। রোহিঙ্গারা সেই আরাকানী মুসলমানের বংশধর। এক সময় আরাকানে স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৪৩০ সালে প্রতিষ্ঠিত মুসলিম শাসন ২০০ বছরেরও অধিককাল স্থায়ী হয়। ১৬৩১ সাল থেকে ১৬৩৫ সাল পর্যন্ত আরাকানে ব্যাপক দুর্ভিক্ষ হয়। এরপর মুসলিম শাসনের অবসান ঘটে। ১৬৬০ সালে আরাকান রাজা থান্দথুধম্মা নিজ রাজ্যে আশ্রিত মোঘল সম্রাট শাহজাদা সুজাকে সপরিবারে হত্যা করে। এরপর শুরু হয় মুসলমানের উপর তার নিষ্ঠুর অমানবিক অত্যাচার নিপীড়ন। প্রায় সাড়ে তিনশ বছর মুসলমানদের কাটাতে হয় এই দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে। ইতিহাস এটা জানায় যে, ১৪৩০ থেকে ১৭৮৪ সাল পর্যন্ত ২২ হাজার বর্গমাইল আয়তনের রোহাঙ্গা/ আরাকান স্বাধীন রাজ্য ছিল। কিন্তু ১৭৮০ সালে বর্মী রাজা বোধাপোয়া আরাকান দখল করে নেয়। সেও ছিল ঘোর মুসলিম বিদ্বেষী। সেই বর্মী রাজা ঢালাওভাবে মুসলিম নিধন করতে থাকে।
তথ্যসূত্রঃ
১) www.bbc.com/bengali
২) www.wikipedia.org
৩) www.prothom-alo.com
৪) www.banglatribune.com
৪) www.bdlive.com
৫) www.somewhereinblog.net
৬) www.bdnews24.com
৭) www.aljazeera.com
৮) www.amrabondhu.com
তথ্যসূত্রঃ
১) www.bbc.com/bengali
২) www.wikipedia.org
৩) www.prothom-alo.com
৪) www.banglatribune.com
৪) www.bdlive.com
৫) www.somewhereinblog.net
৬) www.bdnews24.com
৭) www.aljazeera.com
৮) www.amrabondhu.com
0 মন্তব্যসমূহ